ভূমিকা
২০১৩ সালের আনন্দবাজার পত্রিকার ৭ অক্টোবরের 'কলকাতার কড়চা ' বিভাগের এক প্রতিবেদনে সর্বপ্রথম উত্তর কলকাতায় বাংলার দে-মল্লিক পরিবারের এক সুপ্রাচীন কুলদেবী সিংহ বাহিনী মাতার পূজার কথা জানতে পেরেছিলাম। ওই সূত্রে আরও জানতে পেরেছিলাম যে ওই বছরে এই চারশো বছরের পূজা উপাসনা সম্পন্ন হবে ৩৯ নম্বর জ্যোতিন্দ্রমোহন এভেনিউএর হেমেন্দ্রমোহন মল্লিকের বিশাল বাসভবনে। খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছিলাম যে, এই স্থানটি অরবিন্দ সরণি ও জ্যোতিরিন্দ্রমোহন এভিনিউ র সংযোগস্থলের কাছাকাছি।
দেবীদর্শন
আমরা উত্তর কলকাতার বনেদী বাড়ির পূজাপরিক্রমা চলাকাকীন ঠনঠনিয়ার দ্বারিকাভবনের দত্তবাড়ির প্রতিমা দর্শন সমাপ্ত করে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট ধরে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ ধরে দিকে কিছুটা এগোতেই অরবিন্দ সরণির অদূরে সুসজ্জিত হেমেন্দ্র মল্লিকের বাসভবন সহজেই পেয়ে গেলাম। বাড়িতে প্রবেশ করার সময়ে ওদের সুসজ্জিত প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকেই মনে হলো এক স্বপ্ন পুরিতে এসে পড়েছি।
২০১৩ সালের আনন্দবাজার পত্রিকার ৭ অক্টোবরের 'কলকাতার কড়চা ' বিভাগের এক প্রতিবেদনে সর্বপ্রথম উত্তর কলকাতায় বাংলার দে-মল্লিক পরিবারের এক সুপ্রাচীন কুলদেবী সিংহ বাহিনী মাতার পূজার কথা জানতে পেরেছিলাম। ওই সূত্রে আরও জানতে পেরেছিলাম যে ওই বছরে এই চারশো বছরের পূজা উপাসনা সম্পন্ন হবে ৩৯ নম্বর জ্যোতিন্দ্রমোহন এভেনিউএর হেমেন্দ্রমোহন মল্লিকের বিশাল বাসভবনে। খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছিলাম যে, এই স্থানটি অরবিন্দ সরণি ও জ্যোতিরিন্দ্রমোহন এভিনিউ র সংযোগস্থলের কাছাকাছি।
দেবীদর্শন
আমরা উত্তর কলকাতার বনেদী বাড়ির পূজাপরিক্রমা চলাকাকীন ঠনঠনিয়ার দ্বারিকাভবনের দত্তবাড়ির প্রতিমা দর্শন সমাপ্ত করে মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট ধরে চিত্তরঞ্জন এভিনিউ ধরে দিকে কিছুটা এগোতেই অরবিন্দ সরণির অদূরে সুসজ্জিত হেমেন্দ্র মল্লিকের বাসভবন সহজেই পেয়ে গেলাম। বাড়িতে প্রবেশ করার সময়ে ওদের সুসজ্জিত প্রবেশদ্বার দিয়ে ভিতরে ঢুকেই মনে হলো এক স্বপ্ন পুরিতে এসে পড়েছি।
আগে এই উত্তর কলকাতার অনেক বনেদী বাড়িতে গেছি, কিন্তু কোথাও এরকম পেশাদারীত্বের সঙ্গে বনেদিয়ানার মেলবন্ধন দেখি নি। ভিতরের প্রশস্ত পূজাপ্রাঙ্গন বহু লোকের ভিড়ে এবং মায়াময় পরিবেশে খুবই সুন্দর লাগছিল। প্রাঙ্গনের চতুর্দিকে এবং নিচ থেকে উপরে মৃদু আলোতে এবং অপরূপ অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত ছিল।
ভিড় এড়িয়ে সিংহবাহিনী দেবীর পূজামন্ডপে হাজির হলাম। এক হাত প্রতিমা অষ্টধাতুময় চতুর্ভুজা শ্রী শ্রী সিংহবাহিনী দেবীমাতাকে পুষ্হ্পমাল্যের মধ্যে আবৃত দেখলাম। শুভ্র ধাতুর সিংহাসনের উপরে নীল চাঁদোয়ার নিচে সগৌরবে বিরাজমান এই দেবী। এই দেবীমূর্তি হস্তিমুণ্ড পারিপদ রক্ষা করে সিংহপৃষ্ঠাধিষ্ঠিত শঙ্খ -চক্র -ধনুর্বাণ ধারণ করে আছেন। শিরোশোভা ধাতুময় পঞ্চমুন্ড রজতকিরীট ,ধাতুময় বস্ত্রদ্বারা আবৃতা।
পূজামন্ডপের সবকিছুতেই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও নিপূণ পেশাদারিত্বের ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়।
দেবীর দক্ষিণ পার্শ্বে রক্তবসনাবৃত নবপত্রিকা এবং বাম পার্শ্বে লাল পাড় শাড়িতে আবৃত লক্ষ্মীর ঝাঁপি দেখতে পাওয়া যায়। ওই ঝাঁপিতে সোনার চোখ ও সোনার নাক দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল। এটি সুবর্ণ বনিক সম্প্রদায়ের একটি প্রচলিত রেওয়াজ। অন্য বাড়িতেও এরূপ রেওয়াজ চোখে পড়েছিল।
প্রতিমা প্রবেশের মুখে দুটি সুন্দর ভেনাসের প্রতিমূর্তি রাখা রয়েছে। মৃদু স্বরে সঙ্গীতের মূর্ছনা এক স্বর্গীয় পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল।
আমার কন্যাসমা এক পরিচিত বন্ধুর কাছে শুনেছিলাম যে এই সিংহবাহিনী মাতার এক সুপ্রাচীন ইতিহাস আছে। এছাড়া এই দেবীর পূজার সাথে এই -মল্লিক পরিবারের এক সুদীর্ঘ সম্পর্কেরও এক যোগাযোগ রয়েছে। এই বাড়িতে পূজার সমস্ত পরিচালনা বাড়ির প্রবীণ সদস্যেরা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করছিলেন। এই মন্ডপে নামমাত্র মূল্যে এই সিংহ বাহিনী দেবীর পূজার ইতিহাস ও দে-মল্লিক বাড়ির সঙ্গে এই পূজার যোগাযোগ সম্বলিত একটি তথ্যপুস্তিকা অভ্যাগত অতিথিদের বিতরণ করা হচ্ছিল। মন্ডপ থেকে বেরোনোর আগে প্যাকেটে করে ভোগ সামগ্রী দর্শকদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন এক বর্ষীয়ান ভদ্রলোক।
হেমেন্দ্র মল্লিকের বাড়িতে চারশো বছরের পূজার বিশেষত্ব
দে -মল্লিক বংশের শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী দেবীর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শ্রী বৈদ্যনাথ মল্লিকের পরিবার চারশো বছরে বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন এদের প্রায় সর্বসমেত ৪৫০ শরিক রয়েছে। প্রতিবছরে নতুন নতুন শরিকের বাড়িতে পালা করে এই দেবীমাতার পূজা করা হয়ে থাকে। এবারে এই পূজার চারশো বছরের পূর্তি উপলক্ষে হেমেন্দ্র মল্লিকের বাড়ি পছন্দ করার অনেকগুলি কারণ রয়েছে। প্রথমত হেমেন বাবুর বাড়িতে এক বিশাল পরিসরের বনেদী ঠাকুর দালান রয়েছে। এই দেবী মাতার পূজার বিশেষ বছরে মহাসমারহে অত্যধিক সংখ্যক অতিথি অভ্যাগত ও আত্মীয়স্বজনদের নিয়ে আদর অভ্যর্থনা এখানেই করা সম্ভবপর ছিল। হেমেন বাবুর বাড়িতে শেষবার ১৯৯২ সালে এই দেবীমাতার পূজা সম্পন্ন হয়েছিল। এই বাড়ির মেয়ে ও বৌয়েরা যাদের গত এক দশকের মধ্যে বিয়ে হয়েছে তাঁরা এই বছরে সর্বপ্রথম এই বাড়িতে পূজা হওয়াতে আনন্দে আত্মহারা। সবাই অতিথি অভ্যাগতদের আদর যত্নে আত্মহারা ছিলেন।
হেমেন বাবু এই দেবীমাতার বড়বাজারের বিলাস রায় কাটরায় অবস্থিত দেবোত্তর সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে নিযুক্ত আছেন।
এই শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী দেবীমাতার বিসর্জন হয় না। বিজয়া দশমীর প্রথাগত বিসর্জনের পরেই এই দেবীমাতা অন্য এক শরিকের বাড়িতে তাঁর সিংহাসন সমেত চলে যান। সেখানেই এই দেবীমাতার নিত্যপূজা অনুষ্ঠিত হয় সকাল ও সন্ধ্যাতে। হেমেন মল্লিকের বাড়ির এক প্রতিনিধি সূত্রে জানা গেছে যে এই দেবীমাতা সারা বছর বিভিন্ন শরিকের বাড়িতে পালা করে নিত্য পূজিতা হন।
গতবছরে সপ্তমীর দিন সকালে এই দেবীমাতা শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনীকে শোভাযাত্রা সহকারে হাঁসপুকুরের এক শরিকের বাড়ি থেকে হেমেন মল্লিকের বাড়িতে আনা হয়েছিল। ষষ্ঠীর দিন রাত্রে ঘটে দেবীর বোধন সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। মল্লিক বাড়ির লোকেরা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী হলেও শাক্ত মতে দেবীমাতার পূজা সম্পন্ন হয়। পূজার তিন দিন অর্থাত সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী তে প্রতিবছর পাঠা বলি দেওয়া হয়। কিন্তু এই মাংস বাড়ির লোকেরা স্পর্শ করেন না। দেবীমাতার অন্নভোগ হয় না। নানা রকমের ফল ও মিঠাই ছাড়া বিভিন্ন রকমের ভাজা খাবার যথা লুচি, সিঙ্গারা, কচুরী ইত্যাদি ভোগ হিসাবে দেবীমাতাকে নিবেদন করা হয়। ভোগের দ্রব্যসামগ্রীতে কোন নুন, ঝাল বা টমেটো ব্যবহার করা হয় না. তবুও ভোগের স্বাদ খুবই সুস্বাদু হয়।
বাড়ির মহিলারা পূজার সময় সাবেকি গহনা দিয়ে নিজেদের সুসজ্জিত করেন। বাড়ির একজন বয়স্কা মহিলার কথাতে জানা গেল যে পূজার সময় তাঁরা কোমরে বিছে গোট , নাকে বড় নথ ,হাতে নানা বর্ণের রুলি ও পায়ে মল পড়েন। মহাষ্টমীর সন্ধিপূজার সময় বাড়ির সধবা মহিলারা লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরে ধুনা পোড়ানোর অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
২০১৪ সালে এই শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী দেবীমাতার পূজার পালা পড়েছে এদের অন্য এক শরিক প্রয়াত কাশীনাথ মল্লিকের সিন্দুরিযাপট্টিতে অবস্থিত ঠাকুরবাড়িতে। প্রয়াত কাশীনাথ মল্লিক ছিলেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণের পরম ভক্ত। এই ঠাকুরবাড়িতে দেবী সিংহ বাহিনীর মূর্তি দর্শন উপলক্ষে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ শুভাগমন করেছিলেন। ২০১৪ সালে কাশীনাথ মল্লিকের বর্তমান প্রজন্ম শ্রী বৈদ্যনাথ মল্লিকের ১৪২ মহাত্মা গান্ধী রোডের বাড়িতে এবারে দেবীমাতার পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটি মহাত্মা গান্ধী রোড ও রবীন্দ্র সরণির সংযোগস্থলে রাস্তার ওপরেই লোহার ফটকওয়ালা বাড়ি।
শ্রী শ্রী সিংহবাহিনী দেবীমাতার ইতিহাস ও দে-মল্লিক বাড়ির সহিত সম্পর্ক
দেবীমাতা শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনীর এক চমকপ্রদ ইতিহাস আছে। এই দেবী মূর্তির অর্চনার সঙ্গে এই দে-মল্লিক পরিবারের সম্পর্ক অতি সুপ্রাচীন, আনুমাণিক চারশো বছরের।
প্রাচীন ইতিহাস গবেষণা ও পর্যালোচনা করলে দেখতে পাওয়া যায় যে,আনুমাণিক ইংরাজী ৬০০ খ্রীস্টাব্দে বৈশ্য বংশীয় পূশ্যভুতির বংশধর রাজা হর্ষবর্ধনের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাজা রাজ্যবর্ধন দেবের কুলদেবী ছিলেন এই দেবীমাতা শ্রী শ্রী সিংহবাহিনী। বৈশ্য কুলদেবী এই দেবীমাতাকে এক সময় জয়পুর রাজ ভগবানদাসের ভ্রাতুষ্পুত্র মহারাজ মানসিংহ ছলে, বলে, কৌশলে ও নীতিবহির্ভূত কোনো উপায়ে অপসারিত করে নিজ গৃহে তাঁর গৃহদেবতা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। কথিত আছে যে রাজা মানসিংহের মৃত্যুর পরে পূজার দায়িত্বে থাকা ব্রাহ্মণ পুজারী মুসলমান নবাবের হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে দেবী সিংহবাহিনীর মূর্তি নিয়ে অধুনা বাংলা দেশের চট্টগ্রামে চলে যান এবং ওখানের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের গুহায় নির্জনে পূজা করতে থাকেন।
এবারে এই দে -মল্লিক বংশের পূর্ব ইতিহাস শোনা গেলে এদের সহিত শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী মাতার পূজার সম্পর্ক বুঝতে সহজ হবে। বর্তমানে শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী দেবীমাতা কলকাতার অতি প্রাচীন বাংলার শ্রীসম্পন্ন ও খ্যাতনামা গৌতম গোত্রীয় দে- মল্লিক বংশের কুলদেবী। প্রাচীন ঐতিহ্যময় এই সুবর্ণ বণিক পরিবারটির জাতিগত পদবী 'দে।' এই বৈশ্য বংশের উত্পত্তি অযোধ্যা প্রদেশের রামগড় নগরে। বংশের আদি পুরুষ সোমভদ্র দে'র স্বর্ণ ব্যবসা ছিল। তারপর দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে প্রায় -দশম দ্বাদশ উত্তর পুরুষ পরে মুসলিম রাজত্বে 'মল্লিক' উপাধি অর্জিত হয়। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে এই পরিবারের অন্যতম পূর্বপুরুষ বনমালী মল্লিক হুগলী জেলার ত্রিবেণী তীরে সুবিশাল জমিদারির পত্তন করেন। বনমালী মল্লিক এই জমিদারী থেকে প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হন। নদীয়া জেলার
কাঁচরাপাড়ায় তাঁর একটি আবাদ ছিল। এই আবাদের পাশে তিনি খাল কাটিয়েছিলেন। এই খালটি আজও 'মল্লিক খাল' বলে পরিচিত। তাঁরই সুযোগ্য পুত্র বৈদ্যনাথ মল্লিক স্বপ্নাদেশে শ্রী শ্রী সিংহবাহিনী দেবীমাতা প্রাপ্ত হন।
আনুমাণিক ১০২০ বঙ্গাব্দে এই মল্লিক বংশের পূর্বপুরুষ শ্রী বৈদ্যনাথ মল্লিক কর্মান্তরে বাংলা দেশের ঢাকা শহরে গমন করেন। সেইখানে তিনি আদিম পূর্বপুরুষ বৈশ্য রাজা রাজ্যবর্ধন দেবের কুলদেবী শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনীর মাহাত্ম্য ও অনন্যসাধারণ মহিমার কথা শুনতে পান। তিনি আরও অবগত হন যে শ্রী শ্রী দেবীমাতা মহারাজা মানসিংহের পুজারী কর্তৃক চট্টগ্রাম পাহাড়ের গুহামধ্যে গোপনে পূজিতা হচ্ছেন। তিনি ততক্ষনাত দেবীদর্শনের মানসে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে গমন করেন এবং সেখানে দেবী কর্তৃক সাধু ও নিজে স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে দেবীমাতা প্রাপ্ত হন এবং স্বদেশে সপ্তগ্রামে নিয়ে আসেন।
শুভ গোবিন্দ দ্বাদশী তিথিতে দেবীমাতা শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী মল্লিক বংশে প্রতিষ্ঠিতা হন। বিগত চারশো বছর এই পরিবার সগৌরবে এই পূজা করে আসছেন। সরস্বতী নদী মজে যাওয়াতে ব্যবসা বাণিজ্যের সাথে যুক্ত জাহাজাদির চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সপ্তগ্রামের পতন ঘটে। অন্যদিকে কলকাতা নগরীর শ্রী সম্পদ বৃদ্ধির সঙ্গেসঙ্গে এই মল্লিক পরিবার স্থায়ীভাবে কলকাতার বড়বাজার অঞ্চলে ব্যবসা এবং বসবাসের জন্যে চলে আসেন। সেই অবধি দেবীমাতা শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী কলিকাতা নগরে অধিষ্ঠিতা আছেন।
এবারে এই দেবীমাতা শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী মূর্তির কিছু বর্ণনা দেওয়া যাক। এক হস্ত পরিমিত অষ্টধাতুময় চতুর্ভূজা শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী দেবীমূর্তি হস্তীমুন্ড পারিপদ রক্ষা করে সিংহ পৃষ্ঠস্থিতা শঙ্খ -চক্র-ধনুর্বাণ ধারণ করে আছেন। শিরোশোভা ধাতুময় পঞ্চমুন্ডময় রাজকিরীট ,ধাতুময় বস্ত্রদ্বারা আবৃতা। উল্লেখিত ধাতুময় বস্ত্রে খোদিত নানারূপ কারুকার্য ও তত্সঙ্গে রাজা রাজ্যবর্ধন ও হর্ষবর্ধনের সময়ে প্রচলিত ভাষার অক্ষরে খোদিত ছিল। তেজময়ী দীপ্তি-বিস্ফোরিতা ত্রিনয়ন -বাত্সল্য ও দৃঢ়তায় পরমাজ্জ্বল, শ্রী শ্রী সিংহ বাহিনী দেবীমাতা গঠনে বঙ্গদেশীয় অন্যান্য দেবীমূর্তির সহিত সাদৃস্যবিহীন।